কোম্পানীগঞ্জে ক্লিয়ারেন্স দিতে টাকা চায় পুলিশ
- আপডেট সময় : ০৩:১৮:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৩ ৫১ বার পড়া হয়েছে
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ থানায় পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য টাকা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। উপজেলার ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের টুকেরবাজার এলাকার এক কলেজ শিক্ষার্থীর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিতে চাইলে ওই শিক্ষার্থীর কাছে পুলিশের টাকা চাওয়ার একটি অডিও ক্লিপ সিলেট ভয়েসের কাছে এসেছে।
অডিও ক্লিপে শিক্ষার্থীর উদ্দেশে মোবাইল ফোনে (০১৩১৬১৬৭৯৩৯) ওই কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়, ‘থানার সামনের চায়ের দোকানদার সালামের (বুড়া সালাম) কাছে আমার নাম বলে টাকা দিয়ে যাও।’ তখন শিক্ষার্থীকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনার কাছে ওইদিন যার নম্বর লিখে দিয়ে এসেছিলাম তিনি আপনাকে চা-পানের খরচের টাকা দেবেন। আপনি উনাকে ফোন দেন।’ তারপর ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়, ‘সে কি করবে?’ তখন শিক্ষার্থী বলেন, ‘উনার কাছে টাকা দিয়েছি। উনি টাকা দেবে। আপনি উনাকে ফোন দেন।’ এসময় ওই কর্মকর্তা শিক্ষার্থীকে বলেন, ‘আমি উনার সাথে অন্য কথা বলবো। আপনি উনাকে বলে দেন। আমি উনাকে এগুলো বলতে লজ্জা পাবো।’ তখন শিক্ষার্থী বলেন, আচ্ছা তাহলে আমি উনাকে বলে দিচ্ছি আপনাকে ফোন দিতে।’
এরপর পুলিশ কর্মকর্তাকে আংকেল ডেকে শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমার আইডি কার্ড অনুযায়ী ক্লিয়ারেন্স দেবেন। জন্ম নিবন্ধনে আমার নাম ভুল আছে।’ মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে পুলিশ কর্মকর্তা ‘আচ্ছা ঠিক আছে’ বলে কল কেটে দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দিতে টাকা চাওয়া ওই কর্মকর্তা কোম্পানীগঞ্জ থানার এএসআই মাহাবুব আলম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তাও নিশ্চিত করেছেন, ওই অডিও ক্লিপের ভয়েসে যে ব্যক্তির কথা শোনা যাচ্ছে তিনি থানার এএসআই মাহাবুব আলম।
তারা বলেন, তিনি (মাহাবুব আলম) আমাদের থানার সব থেকে বয়স্ক ব্যক্তি। তিনি থানার সকল ফোর্সের বয়সে সিনিয়র। তিনি পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য শিক্ষার্থী কাছ থেকে যেভাবে টাকা চেয়েছেন তা পুলিশের ভাবমূর্তির জন্য লজ্জাজনক।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য পুলিশ কর্মকর্তার টাকা চাওয়ার অডিও সিলেট ভয়েসের এই প্রতিবেদকের কাছে আসার পর প্রতিবেদক পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নেওয়া আরও কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, তাদের বেশিরভাগই পুলিশের ক্লিয়ারেন্স পেতে কম-বেশি টাকা দিয়েছেন থানার পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের।
এমন একজন উপজেলার লাছুখাল গ্রামের ২৪ বছর বয়সী এক যুবক। নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তিনি সিলেট ভয়েসকে বলেন, ‘পুলিশের ক্লিয়ারেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করে নির্ধারিত সরকারি ব্যাংকে ৫০০ টাকার ট্রেজারি চালান করে থানায় অনলাইনের আবেদনপত্র ও বিভিন্ন কাগজপত্র থানায় জমা দেওয়ার পরে তদন্ত করার জন্য একজন পুলিশ অফিসার ফোন দিয়ে আইডি কার্ড ও জন্ম নিবন্ধনসহ কিছু কাজ নিয়ে দেখা করার জন্য বলেন। পরবর্তীতে আমার কাছ থেকে ৭০০ টাকা নেয় পুলিশ। পরে ক্লিয়ারেন্স আনার সময় আরও টাকা চেয়েছিল, কিন্তু আমি দেইনি। আমার একজন চাচা আওয়ামী লীগের নেতা। তার পরিচয় দিয়ে টাকা দিতে পারবো না বললে আমাকে ক্লিয়ারেন্স দিয়ে দেয়।’
উপজেলার পাড়ুয়া এলাকার এক নারী সিলেট ভয়েসকে বলেন, ‘আমি আমার পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের জন্য অনলাইনে থানায় আবেদন করি। আবেদনের এক/দুইদিন পরে এসআই পদবীর এক কর্মকর্তা আমাকে ফোন দিয়েন জানান আমার পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের তদন্ত তিনিই করবেন। তাই উল্লেখিত কিছু কাজ নিয়ে তার সাথে যোগাযোগ করতে হবে। ফোন পাওয়ার পরদিন আমার ভাতিজাকে সঙ্গে নিয়ে কাগজপত্রসহ থানায় যাই। তখন তিনি আকারে-ইঙ্গিতে আমার কাছে টাকা চান। আমি বিষয়টি এড়িয়ে গেলে তিনি আমার কাছে সরাসরি কাজের খরচের নামে টাকা চান। তখন আমি টাকা পরে দেবো বলে চলে আসি এবং আমার ভাগ্নে স্থানীয় সাংবাদিককে ঘটনা জানাই। সে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে ফোন দিয়ে বলার পরে বিনা টাকায় আমার পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাই। কিন্তু সেই ক্লিয়ারেন্সে আমার স্বামীর নামের জায়গায় পিতার নাম দিয়ে দেয়। পরবর্তীতে জরুরি পুলিশ ক্লিয়ারেন্সটি পেতে আমি পুলিশকে ১ হাজার টাকা দিতে বাধ্য হই।’
অডিও ক্লিপের সেই শিক্ষার্থী সিলেট ভয়েসকে বলেন, ‘তিনি (এএসআই মাহাবুব আলম) আমার কাছে সরাসরি ও ফোনে একাধিকবার টাকা চেয়েছেন। বারবার টাকা চাওয়ায় একবার আমি উনার কথা রেকর্ড করেছি। তিনি আমার নানার বয়সের মানুষ। এ বয়সে তিনি পরকালের চিন্তা না করে অবৈধভাবে টাকা ইনকামের চিন্তা করেন। বিষয়টি পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।’
এ ব্যাপারে কথা বলতে অভিযুক্ত এএসআই মাহাবুব আলমকে একাধিকবার মোবাইলে কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এ প্রসঙ্গে গোয়াইনঘাট সার্কেলের এএসপি প্রবাস কুমার সিংহ বলেন, ‘ক্লিয়ারেন্সের জন্য ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে ব্যাংকে সরকারি ফি প্রদান ছাড়া কোনো ধরনের টাকা নেওয়ার নিয়ম নেই। আমিসহ আমাদের সিনিয়ররা সকল পুলিশ কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি যাতে কেউ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা না নেয়। তারপরও যদি কারও কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকে, তাহলে সেটা তার ব্যক্তিগত লাভের জন্য। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সৌজন্যে: সিলেট ভয়েস