পরিবার ভয়ংকর ও পাশ্চাত্যের ছোবলে
- আপডেট সময় : ০৫:৩৬:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ মে ২০২৩ ৬৫ বার পড়া হয়েছে
মানব ইতিহাসের সবচেয়ে পুরাতন ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলো পরিবার। মানব-সভ্যতার বয়সের সমান এর বয়স। সভ্যতার জন্ম ও অগ্রগতিতে পরিবারের অবদানই সর্বাধিক। নিছক মাতৃগর্ভে জন্ম নিলেই মানবশিশু মানবরূপে বেড়ে উঠে না। সে মানবরূপে বেড়ে উঠার মূল সবক ও প্রশিক্ষণ পায় পরিবার থেকে।
পরিবারের অপরিসীমের গুরুত্বের কথা হাদীস শরীফে বহুভাবে বর্ণিত হয়েছে। নবী করীম (সাঃ) বলছেন, ‘‘প্রতিটি মানবশিশুই জন্ম নেয় মুসলমানরূপে, কিন্তু পিতা-মাতা বা পরিবারের প্রভাবে বেড়ে উঠে ইহুদী, নাসারা বা অমুসলিমরূপে।’’ সভ্যতা নির্মাণের কাজ একমাত্র মানুষের- পশুদের নয়। আল্লাহর খলিফা হওয়ার কারণে প্রতিটি মুসলমানই একাজে দায়বদ্ধ।
তবে এ লক্ষ্যে পরিবার অপরিহার্য। কারণ, সভ্যতার যারা নির্মাতা তাদের নির্মাণেও তো প্রতিষ্ঠান চাই। পরিবার বস্তুত সে কাজটিই করে। মানব ইতিহাসের এই সনাতন প্রতিষ্ঠানটি আজ বিপর্যয়ের মুখে। ফলে বিপন্ন আজ মানবতা এবং থমকে দাঁড়িয়েছে সভ্যতার অগ্রগতি। ইট ধসে গেলে প্রাসাদও ধসে যায়।
তেমনি পরিবার বিধ্বস্ত হলে বিধ্বস্ত হয় সভ্যতা। নির্জন বন-বাদড়ে বা মরুভূমিতে কোন মানবশিশুই সভ্যরূপে বেড়ে উঠে না, সভ্যতাও সেখানে নির্মিত হয় না। উদ্ভিদ বা পশু-পাখির পক্ষে একাকী বেড়ে উঠা সম্ভব হলেও মানুষের পক্ষে তা অসম্ভব। পশুকুলে মানবশিশুকে ছেড়ে দিলে সে শুধু দৈহিক নিরাপত্তাই হারায় না, মানবিক গুণ নিয়ে বেড়ে উঠার সুযোগও হারায়। মানুষ প্রভাবিত হয় তার আশপাশের অন্যকে দেখে।
ছোটবেলা থেকেই যে শিশু ধর্মের নামে পিতা-মাতা ও প্রতিবেশীদের সাপ-শকুন, গরু, পাহাড়-পর্বত ও মূর্তির উপাসনা দেখে সে শিশু পরবর্তীতে নোবেল প্রাইচ পেলেও ছোটবেলার ধর্মীয় বিশ্বাস ও অভ্যাস সহজে ছাড়তে পারে না। এ জন্যই ভারতীয় হিন্দু বিজ্ঞানীগণ সাপ-শকুন, পাহাড়-পর্বত ও মূর্তিপূজার মধ্যে মূর্খতা দেখতে পায় না।
একই কারণে পাশ্চাত্যের একজন সেরা দার্শনিক বা ধার্মিক ব্যক্তি কোনরূপ অসভ্যতা দেখে না উলঙ্গতা, ব্যভিচার, মদ্যপান ও সমকামিতার মধ্যে। পশু যেমন পাশে উলঙ্গতা বা ব্যভিচার হলেও তাতে ভ্রুক্ষেপও করে না, তেমনি অবস্থা পাশ্চাত্য দেশের এসব শিক্ষিতের।
জঘন্য পাপাচার ও কদর্য অসভ্যতাও তাদের কাছে অতিশয় স্বাভাবিক সভ্যকর্মরূপে গণ্য হয়। পাপাচারের প্রকাশ্য প্রদর্শনী এ জন্যই সমাজে বন্ধ হওয়া জরুরি। এ জন্যই জরুরি হলো, পাপাচারমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্রের নির্মাণ। ইসলামে এটি সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। ঈমানদারদের এ কাজটিতেই অন্যরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়।
পরিবার, রাষ্ট্র ও সমাজ একমাত্র এ পথেই পুতঃপবিত্রতা পায় এবং যে কোন সমাজে এটিই সবচেয়ে ব্যয়বহুল কাজ। নবীজী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম তাদের জীবনের সবচেয়ে বড় কোরবানিটি পেশ করেছেন মূলত এ মহান কাজে। রক্তক্ষয়ী জিহাদে লড়েছেন তারা আমৃত্যু। এরূপ অর্থ ব্যয়, রক্তক্ষয়, নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত বা আল্লাহর অন্য কোন বিধান পালনে হয় না। এ বিশ্বে সব জাতি সভ্যতা গড়েনি। জন্ম দেয়নি উন্নত রুচিবোধ বা মূল্যবোধের।
সুশৃক্মখল পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণে যারা সফল, এ কাজ বস্তুত তাদের। আবর্জনার স্তূপের পাশের আবাদী ছেড়ে মানুষ যখন নগর গড়েছে, সভ্যতার নির্মাণও তখন শুরু হয়েছে। নৃশংস বর্বরতায় আরবরা এককালে ইতিহাস গড়েছিল। নিজের জীবিত কন্যাকে তারা জ্যান্ত দাফন করতো।
কিন্তু এ আরবরাই আবার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার জন্ম দিয়েছিল। তাদের এ সফলতার কারণ, আল্লাহর হেদায়েতের অনুসরণ এবং নিজেদের গড়েছেন নবীজীর (সাঃ) আদর্শে। বেদের বস্তি বা ভিখারীর কুঁড়েঘর নির্মাণে নকশা বা মডেল লাগে না, কিছু বাঁশ-কঞ্চি ও খড়-কুটো হলেই যথেষ্ট। কিন্তু সেটি অপরিহার্য তাজমহল নির্মাণে। উন্নত সমাজ ও সভ্যতার নির্মাণে তেমনি অপরিহার্য হলো উন্নত আদর্শ বা নির্দেশনা। ইসলামে সে আদর্শ বা মডেল হলেন স্বয়ং নবীজী (সাঃ)।
আর নির্দেশনা ও মূল নকশাটি দিয়েছেন খোদ আল্লাহতায়ালা এবং আল্লাহতায়ালার সে নির্দেশনা বা হেদায়েত এসেছে পবিত্র কুরআনে। অসভ্য বসবাসে আদর্শ লাগে না। আইয়ামে জাহেলিয়াত যুগের আরবরাই শুধু নয়, আজও বহুশত কোটি মানুষ বসবাস করছে আল্লাহর হেদায়েত ছাড়াই। এতে সভ্যতার মানব সৃষ্টির কাজ সামনে এগোয়নি। বরং প্রচন্ড অসুস্থ বেড়েছে মানব সভ্যতার।
হালাকু-চেঙ্গিজের চেয়ে বর্বর মানুষের জন্ম হয়েছে সভ্যতার এ অসুস্থতার কারণে। আল্লাহর হেদায়েত এবং রাসূল (সাঃ)-এর আদর্শের অনুসরণের ফায়দা যে কত বিশাল ও কল্যাণকর সেটি প্রমাণ করেছেন প্রাথমিককালের মুসলমানরা এবং সেটি মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা নির্মাণের মধ্য দিয়ে।
আলোর মশাল গভীর অন্ধকারেও পথ দেখায়। তেমনি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের নির্মাণে পথ দেখায় নবী-রাসূলের আদর্শ। এক্ষেত্রে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ হলেন, সর্বশেষ নবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ)।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা তাঁকে ‘‘উসওয়াতুন হাসানা’’ বা উত্তম আদর্শ বলেছেন। মুসলমান হওয়ার অর্থ নবীজী (সাঃ)কে শুধু আল্লাহর রাসূল হিসেবে মৌখিক স্বীকৃতি দেয়া নয়, বরং জীবনের প্রতিপদে তাঁকে অনুকরণীয় আদর্শরূপে কবুল করা।
নবীজী (সাঃ)-এর সাথে সাহাবায়ে কেরামের আচরণ সেটিই ছিল। তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে উত্তম আদর্শরূপে বিশ্বাস করা বা অনুসরণ করাই কুফরি। এটি ইসলাম থেকে বিচ্যুতি। সাহাবায়ে কেরাম তাদের সমস্ত কর্ম ও আচরণে তা সে ইবাদত হোক বা ব্যক্তি-পরিবার-রাষ্ট্র ও সমাজ গঠন হোক-তার অনুসৃত আদর্শকে অনুসরণ করেছিলেন।
আলোর ন্যায় নবীজী (সাঃ)-এর আদর্শও আরবের ঘরগুলোকে সেদিন আলোকিত করেছিল। ফলে দূরীভূত হয়েছিল মিথ্যা ও অজ্ঞতার অন্ধকার। তখন ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ শিক্ষালয়ে পরিণত করেছিল মুসলমানদের প্রতিটি ঘর ও প্রতিটি পরিবার এবং এভাবে অতি দ্রুত অগ্রসর হয়েছিলেন উচ্চতর সভ্যতা নির্মাণের দিকে।
সেকালে কোন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না, কিন্তু মুষ্টিমেয় সাহাবীর ঘর থেকে যে মাপের জ্ঞানবান মানুষ তৈরি হয়েছিল তা মুসলিম বিশ্বের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় বিগত হাজার বছরে পারেনি। উচ্চতর সভ্যতা নির্মাণের কাজতো এভাবেই ঘর বা পরিবার থেকে শুরু হয়।
একাজে পরিবার নিষ্ক্রিয় হলে ব্যক্তির উন্নয়নের সাথে উম্মাহর উন্নয়ন থমকে দাঁড়ায়। সভ্যতা কি? এটি হলো জাতীয় জীবনে সভ্যতর ব্যক্তিসমূহের সৃষ্টিশীল কর্ম ও সভ্যতার পরিবর্তনের যোগফল। ফলে একই রকম কুঁড়েঘরে হাজার বছর বাস করলে তাতে সভ্যতা নির্মিত হয় না। কারণ এটি স্থবিরতা।
এমন স্থবিরতায় প্রকাশ পায় আদিম অজ্ঞতাকে আঁকড়ে ধরে বসবাসের প্রবণতা। অথচ পিরামিড বা তাজমহল গড়লে সেটি সভ্যতার অংশ হয়ে যায়। কারণ, তাজমহলের নির্মাণে স্থাপত্যশিল্পকে কুঁড়েঘর নির্মাণের কৌশল থেকে বহু পথ পাড়ি দিতে হয়। সভ্যতার গুণাগুণ বিচারে তো সে অগ্রগতিটুকুরই বিচার হয়।
কিন্তু সভ্যতার তুলনামূলক বিচারে কৃষি, শিল্প, প্রাসাদ বা নগর নির্মাণের পাশাপাশি উচ্চতর মানুষ গড়ার শিল্প কতটা সামনে এগুলো সেটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সেটি যখন উৎকর্ষ পায় তখনই শ্রেষ্ঠতর সভ্যতা নির্মিত হয়। মিসরে বিস্ময়কর পিরামিড বা চীনে বিশাল প্রাচীর নির্মিত হলেও মানবিকতাসম্পন্ন সে বিশাল মাপের মানুষ নির্মিত হয়নি।
অথচ সেটি সম্ভব হয়েছিল ইসলামে। অন্য সভ্যতা থেকে ইসলামী সভ্যতার শ্রেষ্ঠত্বতো এখানেই। নবীজী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘দুঃখ হয় ঐ ব্যক্তির জন্য যার জীবনে দু’টি দিন অতিক্রান্ত হলো অথচ তার জ্ঞান ও তাকওয়ার কোন পরিবর্তনই হলো না।’’ অথচ আজ মুসলিম বিশ্বে এমন মানুষের সংখ্যা কোটি কোটি যাদের জীবনে শুধু দু’টি দিন নয়, হাজারো দিন-এমনকি সমগ্র জীবন কেটে গেছে অথচ তাদের জ্ঞান ও তাকওয়ার ভান্ডারে কোন পরিবর্তনই আসেনি।
সারাটা জীবন বাস করছে অজ্ঞতার ঘোর অন্ধকারের মাঝে। অতিবৃদ্ধ বয়সেও কুরআনের সামান্য একটি সুরাও বোঝবার সামর্থ্য অর্জন করেনি। একজন মানুষের কাছেও দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছানোর সামর্থ্য অর্জন করেনি।
যে মুসলমানের জীবনে পরিবর্তনহীন দু’টি দিন যেখানে অসহ্য সে ব্যক্তি কাদা-মাটি, লতা-পাতা, বাঁশ-কঞ্চির ঘরে হাজারো বছর কাটায় কি করে? অথচ বাংলাদেশের ন্যায় দেশে মুসলমানরাতো সেটিই করেছে। একই রূপ ঘর, একই রূপ কৃষিকাজ ও একই রূপ সংস্কৃতির মাঝে তাদের বসবাস বহুশত বছরের। প্রাথমিক যুগের মুষ্টিমেয় মুসলমানের হাতে সে সময় উন্নত সভ্যতার জন্ম হয়েছিল সেটি তো সামনে চলার প্রবল প্রেরণা থেকেই।
যেখানে পরিবর্তন নেই সেখানে সভ্যতাও নেই। বিশ্বে বহু ভাষা ও বহু ধর্মের বহু জাতির মানুষের বাস। কিন্তু সভ্যতার জন্মদান সবার দ্বারা হয়নি। সভ্যতার জন্মদানে যারা ব্যর্থ, তাদের সে ব্যর্থতার কারণ : তারা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে গড়ে তুলতে পারেনি।
তবে এক্ষেত্রে মূল ব্যর্থতা, আদর্শ পরিবার গড়ায় ব্যর্থতা। কারণ, প্রাসাদ গড়তে যেমন ভাল ইট লাগে তেমনি উচ্চতর সমাজ ও সভ্যতা গড়তেও ভাল মানুষ ও পরিবার লাগে। পরিবার গড়ে উঠেছে বস্তুতঃ মানবিক প্রয়োজনের তাগিদে। অন্য প্রাণীকুল থেকে মানুষের শ্রেষ্ঠতম হওয়ার এটিই মূল কারণ। পশুদের জীবনে সহস্র বছরেও পরিবর্তন আসে না।
গবাদিপশুরা হাজার বছর পূর্বেও যেভাবে ঘাস খেত বা জীবন ধারণ করতো এখনো তাই করে। অথচ মানুষ সামনে এগিয়েছে। এর কারণ পরিবার। এ জীবনে নিজের প্রয়োজন আর কতটুকু? কুকুর-বিড়ালও সমাজে না খেয়ে মরে না। কারণ, তাদের একার প্রয়োজন সব সমাজেই পূরণ হয়। অথচ মানুষকে ভাবতে হয় তার পরিবার ও আপনজনদের নিয়ে। এ ভাবনাই তাকে কর্মশীল, গতিশীল ও দুঃসাহসী করে। পাহাড়-পর্বত, সাগর-মহাসাগরও পাড়ি দেয়। এরূপ অবিরাম উদ্যোগ ও আত্মনিয়োগই ব্যক্তির যোগ্যতা ও সৃজনশীলতা বাড়ায়।
মানুষ জীবনে যা শেখে তার সিংহভাগই শেখে কাজ করতে করতে। তাই যার জীবনে কাজ নেই, তার জীবনে জ্ঞানের বৃদ্ধিও নেই। প্রয়োজনের তাগিদেই সৃষ্টি হয় নতুন আবিষ্কার। যার পরিবার নেই তার জীবনে কর্মে প্রেরণাও নেই।
কারণ, তার প্রয়োজনের মাত্রাটি অতি সামান্য। পরিবার পরিজনহীন সাধু-সন্ন্যাসীদের দ্বারা তাই সভ্যতার নির্মাণ দূরে থাকে একখানি গৃহ নির্মাণও অসম্ভব। ফলে এমন মানুষরে সংখ্যাবৃদ্ধিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সমাজ ও রাষ্ট্র এবং বাধাগ্রস্ত হয় সভ্যতার নির্মাণ বা অগ্রগতি।
ইসলামে তাই বৈরাগ্য জীবনের কোন স্থান নেই। মানবশিশু তার পরিবার থেকে শুধু প্রতিপালনই পায় না, জীবনের মূল পাঠগুলোও পায়। শেখে কিভাবে তাকে বেড়ে উঠতে হয়। শেখে কর্মকুশলতা, শেখে কিভাবে অন্যদের দুঃখে দুঃখী এবং সুখে সুখী হতে হয়। পরিবার থেকেই ব্যক্তি পায় উন্নত রুচিবোধ, মূল্যবোধ ও বাঁচবার সংস্কৃতি।
মানুষ যখন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় গড়েনি তখনও জীবনের সর্বোচ্চ শিক্ষা পেত পিতা-মাতা, ভাই-বোন, দাদা-দাদী ও অন্যান্য আপনজনদের থেকে। পিরামিড বা তাজমহলের ন্যায় শ্রেষ্ঠ স্থাপত্যশিল্পগুলো যারা গড়েছিলেন তারাও কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিদ্যা হাসিল করেননি। সে উচ্চতর বিদ্যা পেয়েছিলেন নিজেদের পরিবার থেকে।
পরিবারই যে মানবজাতির শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়- সে প্রমাণ তাই প্রচুর। অথচ আজ সেটিই ভয়ানক বিপর্যয়ের মুখে। বিশাল বিশাল কল-কারখানা বৃদ্ধির সাথে যেমন বিলুপ্ত হয়েছে পরিবারভিত্তিক কুঠির শিল্প, যান্ত্রিকতা বৃদ্ধির সাথে তেমনি বিলুপ্ত হচ্ছে পরিবার ও পরিবার ভিত্তিক শিক্ষালয়।
ফলে মানুষের কেতাবী বা কারিগরি জ্ঞান বাড়লেও বিধ্বস্ত হচ্ছে মূল্যবোধ। সম্পদ বাড়লেও মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে মানবিক গুণবালীতে। একমাত্র পারিবারিক শান্তিই ব্যক্তিকে দেয় প্রকৃত শান্তি। পরিবার হলো জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। ব্যক্তির সকল ব্যস্ততাই শুধু নয়, তার সকল স্বপ্ন ও আশা-ভরসা দোল খায় এ পরিবারকে ঘিরে।
ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত মানুষ যেখানে শান্তি খুঁজে পায় সেটি তার অফিস নয়, কারখানা বা অন্যকোন কর্মক্ষেত্রও নয়। বরং সেটি হলো তার পরিবার। অশান্তি একবার পরিবারে বাসা বাঁধলে সেটি কোন ওষুধেই দূর হবার নয়। অশান্তির সে আগুন তখন গৃহের সীমানা ডিঙ্গিয়ে রাজপথে, লোকালয়ে বা কর্মস্থলে গড়িয়ে পড়ে। তখন সামাজিক অশান্তি বাড়ে সর্বত্রজুড়ে। ক্রমঃর্বধমান মাদকাসক্তি, গ্যাংফাইট ও সন্ত্রাস এসব তো জন্ম পায় পারিবারীক অশান্তি থেকেই।
উলঙ্গতা, মদ্যপান, ব্যাভিচার ও নানা পাপাচার পরিবারে প্রতিপালন পেলে তখন তাতে সমাজও পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। মানুষ তার ন্যায়বোধ, রুচিবোধ, মূল্যবোধ ও আচার-আচরণ নিয়ে জন্মায় না, এগুলো সে পায় পরিবার থেকে। আর এগুলো নিয়েই তার সর্বত্র বিচরণ। অপর দিকে বাইরের জগতে যতই সমৃদ্ধি হোক, তাতে পরিবারে শান্তি আসেনা।
একাজ ব্যক্তির একান্তই নিজস্ব। পরিবারকে ঘিরেই শান্তির নিরাপদ দুর্গটি গড়ে উঠে প্রেম-প্রীতি, ভালবাসা ও উচ্চতর মূল্যবোধের ভিত্তি। নিছক পানাহার, যৌনতা বা যৌথবাসই পরি বারের ভিত্তি নয়। এটি নিছক পশুসুলভ। পরিবার গড়ে উঠে উচ্চতর এক উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। দেহ-ভিত্তিক বা যৌনতা-ভিত্তিক সম্পর্ক প্রাধান্য পেলে মানুষ তখন আর পশু থেকে শ্রেষ্ঠতর থাকে না।
এর জন্য পরিবারের প্রয়োজনও পড়ে না। ঘরবাড়ি ও পরিবার ছাড়াই জীব-জন্তু যুগ যুগ বেঁচে আছে। তাদের বংশবিস্তারও হয়েছে। পশুর মত বসবাস, পানাহার বা অবাধ যৌনতা এ বিশ্বে কোনকালেই কম ছিল না। এরপরও মানুষ ঘর বেঁধেছে, পরিবার গড়েছে। শুধু নিজের নয়, সমগ্র পরিবার ও পরিবারের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যদের দায়-দায়িত্বও মাথায় তুলে নিয়েছে।
শুধু ভোগ নয়, দায়িত্ব-পালনও যে বাঁচবার অন্যতম মিশন- মানুষ এভাবেই তার স্বাক্ষর রেখেছে। সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণ দূরে থাক একাকী একখানি ঘরও উঠানো যায় না। এর জন্য পারস্পারিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা চাই। পরিবার তো শিশুকাল থেকে সেটিরও অভ্যাস গড়ে তোলে। প্রাকটিসের জন্য দেয় একটি অবকাঠামো।
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মাধ্যমে যে সংযোগ গড়ে উঠে সেটি নিছক দুটি ব্যক্তির নয়, বরং সেটি দুটি পরিবার, দুটি গোত্র বা দুটি জনপদের মাঝে। সষ্টি হয় সৌর্হাদ-সম্প্রীতির অভ্যাস। রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনে এ সম্পর্ক সিমেন্টের কাজ করে। মানব সমাজ এতে সংঘবদ্ধতা বা সামাজিক বন্ধন পায়। বৃদ্ধি পায় পারস্পরকি আস্থা ও শ্রদ্ধাবোধ।
পরিবারের মূল ভিত্তি শুধু আইন নয় বরং এ মূল্যবোধ। ফলে এ মূল্যবোধ বিলুপ্ত হলে বিলুপ্ত হয় পরিবার। বস্তবাদী জীবন দর্শনে যা কিছু দর্শনীয় ও চিত্তাকর্ষক, যাতে থাকে নগদপ্রাপ্তি সেগুলোই গুরুত্ব পায়। তখন গুরুত্ব হারায় নীতি-নৈতিকতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ, পরকালীন ভয় ইত্যাদি অদৃশ্য বিষয়।
এমন সেক্যুলার পরিবারে স্বার্থপরতাও ন্যায্য কর্মে পরিণত হয়। পরিবার তখন পরিণত হয় দুর্বৃত্তদের দুর্গে। পাপাচারী দুর্বৃত্তরা সেখানে শুধু প্রতিরক্ষাই পায় না, সম্মানও পায়। তখন পরিবারগুলো পরিণত হয় দুর্বৃত্তদের পাঠশালায়। তখন দেশে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়লেও দুর্বত্তি কমে না।
বরং আকাশচুম্বি হয়। চোর-ডাকাত, ঘুষ-খোর, সূদ-খোর, ব্যাভিচারি, সন্ত্রাসী এমন ঘরে তিরস্কৃত না হয়ে নন্দিত হয়। পায় নতুন দুবৃত্তির অনুপ্রেরণা। একারণেই আধুনিক মানুষ দুর্বৃত্তি ও মানব-হত্যায় অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এমন মানুষ তার কর্মে ও উদ্যোগে অনুপ্রেরণা পায় অর্থনৈতিক স্বার্থ-সিদ্ধি, যৌনলি≈া ও প্রতিপত্তা বিস্তারের তাড়না থেকে। যেখানেই শিকার, শিকারী পশুর সেখানেই পদচারণা।
অনুরূপ অবস্থা বস্তুবাদী ও ভোগবাদী স্বার্থশিকারীদেরও। এমন এক স্বার্থশিকারি চেতনায় নতুন যৌন শিকার ধরতে নানা বাহানায় বিচ্ছিন্ন হচ্ছে পুরনো শিকারী থেকে। এতে বিচ্ছেদ নেমে আসছে বিবাহবন্ধনে। গাড়ি পাল্টানোর চেয়ে স্ত্রী বা স্বামী পাল্টানো এজন্যই রুটিনে পরিণত হয়েছে। আর এতে বাড়ছে পারিবারিক বিপর্যয়। নিজেদের ভোগ-বিলাস ও আনন্দ-উল্লাস বাড়াতে পাশ্চাত্যরে মানুষ নিজের ঘাড় থেকে দায়িত্বের বোঝা কমিয়েছে। আর মানুষের ঘাড়ে তো সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যা প্রতিপালনের দায়িত্ব।
সে দায়িত্ব কমাতে গিয়ে বিধ্বস্ত করেছে পরিবার। অধিকাংশ নারী হারিয়েছে সন্তান জন্মদানের আগ্রহ। অথচ স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সন্তান বন্ধনের কাজ করে। তাছাড়া পরিবার গড়তে হলে বৈবাহিক জীবনের স্থায়ীত্বটি জরুরি। চোরাবালীর ওপর যেমন বিল্ডিং গড়া যায় না, তেমনি নড়বড়ে বৈবাহিক সম্পর্কের ওপর নিভর করে পরিবার গড়ে উঠে না।
এজন্য স্বামী-স্ত্রীর সুসম্পর্ক ও টেকসই সম্প্রীতি প্রয়োজন। বিবাহের পর স্বামী-স্ত্রীর মাঝে একে অপররে উপর শুধু অধিকারই প্রতিষ্ঠিত হয়না, দায়িত্বও অর্পিত হয়। সে দায়িত্ব এড়াতে পাশ্চাত্যের মানুষ বিবাহ এড়িয়ে যাচ্ছে। এমন অসুস্থ্য চেতনায় মজবুত পরিবার গড়ে উঠবে সেটি কি আশা করা যায়? ফলে বিধস্ত হচ্ছে পারিবারিক শান্তি। শান্তির খোঁজে পাশ্চাত্যের অশান্ত মানুষ এখন বিকল্প পথ ধরেছে।
বেড়েছে প্রমোদ-ভ্রমণ, বেড়েছে মদ্যপান, বেশ্যাবৃত্তি, যৌনতা ও ড্রাগের আসক্তি। এমন স্বেচ্ছাচারি জীবন-উপভোগে পারিবারিক বন্ধনকে এরা পায়ের বেড়ি মনে করে, একারণেই শত্রুতা এটির বিরুদ্ধেও। সন্তান যৌন-বাজারে বাজার-দর কমাবে এ ভয়ে গর্ভপাতের নামে অবাধে শিশু হত্যা হচ্ছে। এভাবে পরিবার পরিণত হয়েছে মানব-হত্যার প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রে। পরিবার বিধস্ত হওয়ায় সবচেয়ে বেশি অসহায় ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নারী। পাশ্চাত্য সমাজে তাদের কদর বেড়েছে বিজ্ঞাপন, পর্ণ-ফিল্ম ও নাচ-গানের মত বিনোদন শিল্পে।
অথচ আবহমান কাল থেকেই নারীদের জন্য পরিবার ছিল সুরক্ষিত দুর্গ। সেখানে মা হিসাবে সন্তানদের গভীর সম্মান, কন্যা ও বোনরূপে আদর ও স্নেহ এবং স্ত্রী হিসাবে ভালবাসা তারা যুগ যুগ পেয়ে এসেছে। অথচ নারী স্বাধীনতা, নারীর ক্ষমতায়ন ও সম-অধিকার ইত্যাদি নানা বাহানায় সেখান থেকে বের করে তাদেরকে অসহায় ও অরক্ষতি করা হয়েছে। ফলে তারা আজ ধর্ষণ, হত্যা ও নানাবধি পাশবকি অত্যাচারের শিকার। সুরক্ষিত পরিবার থেকে বের করে তাদেরকে যেন ক্ষুধার্ত ও হিংস্র পশুর সামনে ফেলা হয়েছে।
এমন অরক্ষিত অবস্থান থেকে নারীর পক্ষে সন্তান পালনের মত দায়িত্ব-পালন কি সম্ভব? তাছাড়া সন্তান পালন কোন লঘু-দায়িত্ব নয়, খন্ডকালীন কাজও নয়। এ কাজ নিজেই রাতদিনের এক সার্বক্ষণিক ব্যস্ততা। কল-কারখানা, অফিস-আদালত, সেনা বা পুলিশ বাহিনীতে গুরুদায়িত্ব পালনের পর কি এ কাজের আর সামর্থ্য থাকে? ভ্রান্ত পথে নারীর মর্যাদা বাড়াতে গিয়ে এভাবে বিপর্যয় বাড়ানো হয়েছে।
পণ্যের ন্যায় নারীকেও বাজারে তুলা হয়েছে। নারীর দুটি সত্তা। একটি তার নারীত্ব। অপরটি যৌনতা। পর্দা যৌনতাকে আড়াল করে, আর প্রকাশ করে তার মহান নারীত্বকে। তখন সে সমাজে মা-বোন বা স্ত্রীর সম্মানজনক মর্যাদা পায়। মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের জান্নাতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
নারীত্বের বদলে যথন যৌনতা প্রাধান্য পেয়েছে তখনই নারীর জীবনে প্রচন্ড বিপর্যয় নেমে এসেছে। তখন বিধ্বস্ত হয়েছে পরিবার। যৌনতা নিয়ে বাণিজ্য জমে, কিন্তু তাতে পরিবার প্রতিষ্ঠা পায় না। এজন্যই পতিতাদের কোন পরিবার থাকে না। পাশ্চাত্যে নারীর যৌন সত্তা নিয়ে ব্যণিজ্যে যে কতটা রমরমা ভাব, সেটির প্রমাণ মেলে অলিতে গলিতে নাইট ক্লাব, মদ্যশালা বা পাব ও পতিতাপল্লীর সংখ্যা দেখে।
পণ্যের বাজারজাত করণে গুরুত্বপূর্ণ হলো আর্কষণীয় প্যাকেজিং। তেমনটি ঘটেছে নারীর ক্ষেত্রেও। এবং সেটি ঘটেছে নিত্য-নতুন ফ্যাশানের নামে। ফ্যাশানের প্রকোপে বিলুপ্ত হয়েছে পর্দা ও শালীন পোষাক। অথচ পর্দা যুগ যুগ ধরে নারীর যৌনতাকে ঢেকে রেখেছে এবং নিরাপত্তা দিয়েছে এবং মহীয়ান করেছে তার নারীত্বকে।
জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে পর্দা চিহ্নিত হয়ে এসেছে সভ্যতা ও শিষ্ঠতার প্রতীক রূপে। মানব জাতির এটি অতি সনাতন প্রথা। যখন বস্ত্র ছিলনা তখনও মানুষ গাছের পাতা বা ছাল, চামড়া ইত্যাদি দিয়ে লজ্জা নিবারনের চেষ্টা করেছে। বাংকার বা পরিখার নিরাপদ আশ্রয় থেকে কাউকে বের করে খোলা ময়দানে গুলীর লক্ষ্যবস্তু বানানো সহজ। স্বার্থশিকারী পুরুষেরাও চায় চায় ঘরের নিরাপদ আশ্রয় থেকে নারীদের বের করে আনতে। পাশ্চাত্যে বস্তুতঃ সেটিই করা হয়েছে।
ফলে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির জোয়ারে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নারী। ধর্মহীন ও বিবেকহীন মানুষের শোষণ, শাসন ও নির্যাতনের শিকার যেমন দুর্বল মানুষ, তেমনি যৌন শোষণের শিকার হলো দুর্বল নারী।
অথচ নারী স্বাধীনতা ও সম-অধিকারের গলাবাজী ও প্রলোভনে তাদরেকে আত্মভোলা করে রাখা হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর বৈবাহিক সম্পর্কে আপোষ চলেনা। তাদের সম্পর্কে অন্য কেউ ভাগীদার হবে সেটিও অকল্পনীয়। কিন্তু ভোগবাদীদের কাছে এমন আপোষহীনতা কুসংস্কার।
মদমত্ত নাচের তালে অন্যের স্ত্রীকে যেমন তারা কাছে টানে, তেমনি নিজের স্ত্রীকে সঁপে দেয় অন্যের আলিঙ্গনে। এরূপ সংস্কৃতির পরিচর্যা বাড়াতেই পাশ্চাত্যের প্রতি লোকালয়ে গড়ে উঠেছে নাইট ক্লাব। আর এটিই হলো আধুনিক পাশ্চাত্য সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতিতে যেটি বাড়ে সেটি পাপ।
প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক দলের কর্মী, উচ্চ পদস্থ কর্মচারী, এমনকি গীর্জার পাদ্রীও আক্রান্ত এ পাপাচারে। ফলে বিপণ্ণ হয়েছে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক আস্থা ও সম্পর্ক। এতে ভেঙ্গে যাচ্ছে পরিবার এবং সুফল মিলছে না বারবার বিবাহতেও।
আর বিবাহিত জীবন ব্যর্থ হলে যেটি বাড়ে সেটি হলো ব্যভিচার। পাশ্চাত্যে সেটিই হয়েছে। আর কোন রাষ্ট্র বা সমাজ পাপাচারে প্লাবিত হলে পাপের সংজ্ঞাই পাল্টে যায়। তখন পাপ আর পাপ রূপে গণ্য হয় না। গণ্য হয় শিষ্ঠ কর্ম রূপে। এমন পাপকে পাপীষ্ঠরা অতীতে ধর্ম-কর্মও বলছে।
যেমন কা’বাকে ঘিরে পৌত্তলিক কাফেরদের উলঙ্গ তোয়াফ বা ভারতীয় মন্দিরে যৌন দাসীদের সাথে ব্যাভিচার। পাপতো তাই যা নীতি ও নৈতিকতা বিরোধী, যা শিষ্টতার খেলাপ। সে নীতি ও নৈতিকতাই যদি পাল্টে যায় তবে সেগুলো কি আর পাপ রূপে গণ্য হয়? ব্যভিচার, সমকামিতা ও হোমোসেক্সুয়ালিটি এ কারণেই পাশ্চাত্য সমাজে আজ আর অপরাধ নয়, বরং আইনসিদ্ধ বৈধ কর্ম।
এখন এ পাপগুলোকেই তারা বিশ্বব্যাপী সিদ্ধ করতে চাচ্ছে। এরা এ পাপাচারকেই এখন নাগরিক অধিকারে পরিণত করতে চায়। এ কাজে তারা ব্যবহার করছে জাতিসংঘকে। পরিবার ভেঙ্গে যারা পতিতার পল্লীতে আশ্রয় নিয়েছে তাদেরকে বলছে সেক্স ওয়ার্কার। ব্যভিচারের ন্যায় পাপাচারের বিরুদ্ধে এতকাল যে ঘৃণাবোধ ছিল এখন সেটিই বিলুপ্ত করছে।
প্রশ্ন হলো, যে মূল্যবোধে এমন পাপাচার প্রশ্রয় পায় সে মূল্যবোধে কি পরিবার বাঁচে? প্রশ্ন হলো এ বিনাশী বিপর্যয় থেকে উদ্ধার কোন পথে? পথ একটিই, আর ত হলো ইসলামের পূর্ণ অনুসরণ। সে সাথে পাশ্চাত্যের মূল্যবোধ, জীবনচেতনা ও সংস্কৃতিকে বর্জন করা।
চিন্তা-চেতনার মডেল না পাল্টালে কর্ম ও আচরণেও কোন পরিবর্তন আসে না। নবীজী (সা:) সে কাজটিই করেছিলেন। বিপর্যস্ত পরিবার বস্তুত: রোগগ্রস্ত চেতনার সিম্পটম মাত্র। মূল রোগ আরো গভীর। আর সেটি হলো ইসলামে অজ্ঞতা। অজ্ঞতায় যেটি বাড়ে সেটি আল্লাহ ও তাঁর দ্বীনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ।
মানব সভ্যতা কোন কালেই সম্পদের কমতির কারণে বিপর্যস্ত হয়নি। বিপর্যস্ত হয়েছে নৈতিক বিপর্যয়ের কারণে। দুর্ভিক্ষে যদিও প্রাণ নাশ হয় তবে তাতে সভ্যতার বিনাশ হয় না। প্রাচীনকালে পাহাড় কেটে সামুদ জাতি সুরম্য প্রাসাদ গড়েছিল। তারা নিশ্চিহ্ন হয়েছিল। নিশ্চিহ্ন হয়েছিল নমরূদ-ফিরাউন।
এর কারণ আল্লাহর অবাধ্যতা। অথচ ফিরাউন বহু হাজার বছর আগে স্থাপত্যে বিস্ময়কর ইতিহাস গড়েছিল। পাশ্চাত্যের ঘাড়ে এই একই রোগ চেপেছে। প্রাচুর্যের অহংকার শুধু সত্যকে মেনে নিতেই অমনোযোগী করেনি। বরং সেটি আল্লাহর দ্বীনের বিরুদ্ধে তাদেরকে যুদ্ধাংদেহীও করেছে।
উদ্ধৃত ও প্রচন্ড অহংকারী করেছে হোমোসেক্সুয়ালিটি, মদ্যপান, উলঙ্গত, পর্ণোগ্রাফী এসব পাপ কর্ম নিয়েও। এমন পাপের অধিকারকে তারা মানবাধিকার বলছে। অতীতে যে দুর্ভোগ হয়েছে রোগব্যাধির কারণে, এখন তার চেয়েও বেশী দুর্যোগ হচ্ছে এরূপ বিধ্বস্ত মূল্যবোধ ও বিপর্যস্ত পরিবারের কারণে। পাশ্চাত্যের মূল বিপদ এখানেই।
গাড়ীর মডেল নিয়ে তাদের যতটা ব্যস্ততা, পথের ডিরেকশন নিয়ে ততটা নয়। এ অবস্থায় রোগ যেমন বাড়ছে তেমনি তীব্রতর হচ্ছে সিম্পটম। এমন বিপর্যয়ের মুখে পাশ্চাত্যের সমাজ বিজ্ঞানী বা দার্শনিকগণ অসহায়। যে স্রোতের টানে তারা গা ভাসিয়ে দিছে সেটিতে তাদের ভাসিয়ে নিয়ে ছাড়বে।
এ অসুস্থ সভ্যতাকে বাঁচাতে তাদের সকল সামর্থ নি:শেষ। বিশ্বের অন্য ধর্ম ও মতবাদগুলোরও একই রূপ বেহাল অবস্থা। তাছাড়া এসব অনৈতিক চেতনা ও জীবনবোধ পরিবারে শান্তি এনেছে সমগ্র ইতিহাসে তার নজির নেই। এমন নৈতিক বির্পয়ের মোকাবিলায় একমাত্র ইসলামই শেষ ভরসা। তাছাড়া এমন বিপর্যয়ের মুখে মানব জাতির উদ্ধারে একমাত্র ইসলামই অতীতে সফলতা দেখিয়েছে। সেটি একবার নয়, বহুবার।
শুধু একটি জনপদে নয়, অসংখ্য জনপদে। ইসলামের সে সামর্থ এখনও অম্লান। আল্লাহর প্রদর্শিত এ পথটি এখনও অক্ষত তার বিস্ময়কর নির্ভুলতা নিয়ে। স্রষ্টার পক্ষ থেকে বস্তুত: এটিই একমাত্র প্রেসক্রিপশন
। এ প্রেসক্রিপশন অপরিহার্য শুধু সমাজ ও রাষ্ট্রের বিধানেই নয়, বিপর্যস্ত পরিবারকে বাঁচাতেও। বর্তমানের পারিবারিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে হবে!
লেখক- গবেষক, কলামিস্ট, পাঠান পাড়া, (খান বাড়ী) কদমতলী, সদর, সিলেট-৩১১১, মোবাঃ ০১৯৬৩৬৭১৯১৭