দেখার যেন কেউ নেই পরিবহণ শ্রমিক-মালিকদের কাছে কী ‘জিম্মি’ সিলেটবাসী?
- আপডেট সময় : ০৫:৩৭:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২০ ৫৪ বার পড়া হয়েছে
বিশেষ সংবাদদাতাঃ সিএনজি চালিত অটোরিক্সায় গ্রিল লাগানো যাবেনা এবং সিলেটের সকল পাথর কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবিতে সিলেটে টানা ৩ দিন থেকে ধর্মঘট পালন করছে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা। চলবে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্তও। আর অব্যাহত এ পরিবহণ ধর্মঘটকে অযৌক্তিক দাবি করে সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, ‘চলমান এ ধর্মঘটে শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করার বিষয়টি সিন্ডিকেট আন্দোলন। একই সাথে আন্দোলনের মাধ্যমে আদালত অবমাননা করা হচ্ছে। আর এই সিন্ডিকেটের কাছে কার্যত জিম্মি হয়ে পড়েছেন সিলেটবাসী। মূলত সিলেটের পরিবহণ শ্রমিক নেতা নামধারী কতিপয় ব্যক্তিদের ব্যবসায়িক স্বার্থ উদ্ধারে শ্রমিকদের ব্যবহার করে ফায়দা হাসিলের চেষ্টায় রয়েছেন। দীর্ঘদিন যাবত এ সিন্ডিকেট বহাল তবিয়তে চালিয়ে যাচেছ তাদের এসব কার্যক্রম। চলমান এ ধর্মঘট তাদের ব্যবসা প্রসারের একটি নতুন ক্ষেত্র।’
সিলেটে পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবিতে পাথর ব্যবসায়ি ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা বিভাগজুড়ে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন বুধবার সকালে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে ধর্মঘট পালন করতে দেখা গেছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের। কোথাও চলতে দেয়া হচ্ছে না কোন প্রকারের যানবাহন। এতে করে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। অনেককে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে। তবে নগরিতে হালকা ও প্রাইভেট যান চলাচল করছে। রিকশা এবং পাঠাও-এর মোটর সাইকেলের মাধ্যমে জরুরী কাজে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করছেন যাত্রীরা। শুধু তাই নয়, সরকারি পরিবহন সংস্থা বিআরটিসি বাস সার্ভিসের সিলেট ডিপো থেকে ছেড়ে যাওয়া ভোলাগঞ্জগামী একটি বাস আটকিয়ে চাকা পাংচারসহ যাত্রীদের সাথে হয়রানি করছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। কুমারগাঁও পয়েন্টে সুনামগঞ্জগামী বিআরটিসি বাস আটকিয়ে যাত্রী সাধারণের সাথে অশালীন আচরণ করে স্থানীয় শ্রমিকরা।
বিআরটিসি সিলেট’র ডিপো ম্যানেজার মোঃ জুলফিকার আলী জানান, সিলেটবাসীর যাতায়াত সুবিধার্থে চালু করা বিআরটিসি বাস বুধবার থেকে কোথাও পুরোপুরি পৌঁছাতে পারে নি। দু’টি বাস ছেড়ে গেলেও রাস্তায় বিক্ষুব্ধ পরিবহণ শ্রমিকরা বাস আটকে রাখে এবং যাত্রীদের সাথে অশালীন আচরণ করে। এদিকে, বাস মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, ‘এবারের ধর্মঘটে বাস মালিক সমিতি নেই। শুধুমাত্র শ্রমিক সংকট থাকায় আমাদের বাসগুলো চলাচল করতে পারছে না।’ আর পণ্য পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাথর কোয়ারি খুলে না দেয়ার কারণে শ্রমিকরা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। কাজ নেই, বাসেও যাত্রী নেই। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই তারা গণপরিবহণকে সঙ্গে নিয়েই ধর্মঘট করছেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়ক এ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা আখতার বলেন, ‘পাথর উত্তোলন কিংবা কোয়ারি খুলে দেয়ার দাবি যেটাই হোক না কেন, সেই দাবির সমর্থনে বা দাবি নিয়ে যদি আন্দোলন করা হয় এবং পাথর শ্রমিকদের দোহাই দিয়ে ব্যবসায়িক স্বার্থ সিদ্ধির জন্য পরিবহন ধর্মঘট করা হয়, তবে অবশ্যই তা অযৌক্তিক। কারণ সব পরিবহণ শ্রমিক তো আর পাথর সংশ্লিষ্ট না, আবার পরিবহণের একমাত্র পণ্য তো পাথরও না।
আর সিলেটের যেসব পাথর কোয়ারি নিয়ে আদালতে রিট আছে বা রায় আছে এবং ক্ষেত্রবিশেষে আদালতের রায় না মানার কারণে আদালত অবমাননারও আদেশ আছে। সব মিলিয়ে এই বিষয়ে ধর্মঘট করা বা ধর্মঘটে সমর্থন করা আদালতের রায়ের পরিপন্থী একটি কার্যক্রম। এটি আদালত অবমাননা। আর এই কার্যক্রমের সাথে যারা জড়িত বা যারা সমর্থক বা বন্ধ করার দায়িত্ব থেকেও যারা বন্ধ করছেন না তারা সকলেই আদালত অবমাননা করছেন।’ সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘পরিবহণ মালিক-শ্রমিক নেতারা বর্তমানে শ্রমিকদের কথা বললেও বিগত বছরগুলোতে পাথর কোয়ারিতে যেসব শ্রমিক মারা গেছেন, কোনো শ্রমিক কে কী তারা আর্থিক সহযোগিতা করেছেন? যদি তারা সহযোগিতা না করেন তাহলে হঠাৎ তারা শ্রমিক দরদী হলো কিভাবে? আর পরিবহণ ধর্মঘট ডেকে এসব নেতারা হাইকোর্টের আদেশকে লঙ্ঘন করছেন। আমরা আশা করবো, মহামান্য হাইকোর্ট এ বিষয়ে আদালত অবমাননার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম চলমান পরিবহণ ধর্মঘটকে ‘সিন্ডিকেট’ আন্দোলন হিসেবে অবিহিত করে বলেন, ‘পাথরখেকোদের কালো টাকার কাছে শ্রমিক নেতারা বিক্রি হয়ে এই অযৌক্তিক আন্দোলন করছেন। এটি কালো টাকার ক্ষমতা হিসেবেও দেখতে হবে।’ সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, ‘বাস মালিক সমিতি পরিবহন ধর্মঘটের সঙ্গে নেই। কিন্তু শ্রমিকদের অনুপস্থিতির কারণে আমরা বাস চালাতে পারছি না।’ প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে ধর্মঘট শুরু হয়েছে। চলবে ২৫ ডিসেম্বর শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত। ধর্মঘটে সিলেট বিভাগের তিন জেলায় বাস, ট্রাক, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, কোচ, ট্যাংকলরি, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ সব গণপরিবহনের চলাচল বন্ধ থাকার কথা জানানো থাকার কথা জানানো হয়। তবে অ্যাম্বুলেন্স, বিদেশগামী যাত্রী, ফায়ার সার্ভিস, সংবাদপত্র ও জরুরী ওষুধ সরবরাহের গাড়ি ধর্মঘটের আওতামুক্ত রয়েছে।