সুনামগঞ্জে জাউয়াবাজার পুলিশ ফাঁড়ী ইনচার্জ ও ছাতক থানার ওসির বিরুদ্ধে উৎকোচ দাবির অভিযোগ
- আপডেট সময় : ০৭:০০:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২১ ৪৯ বার পড়া হয়েছে
সাহাদ উদ্দিন দুলাল :: সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার জাউয়াবাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর সাজ্জাদুর রহমানের বিরুদ্ধে নালিশ প্রার্থীর সাথে অশোভন আচরণ, ক্ষমতার দাপট দেখানো এবং ন্যাক্কারজনকভাবে উৎকোচ দাবির অভিযোগ করা হয়েছে। গত বুধবার সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার বরাবরে জাউয়াবাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোজাক্কির আহমেদ এক দরখাস্তে এ অভিযোগ পেশ করেন। অভিযোগপত্রে একই সাথে ছাতক থানার ওসি ইন্সপেক্টর শাহ নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধেও অনুরূপ উৎকোচ দাবির অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, জাউয়াবাজারের জাউয়া মৌজার এসএ ৩৭নং দাগের ০২.২৫ শতক ভূমিতে থাকা দোকানকোটাটি দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার বাগেরকোনা নিবাসী রওশন খান সাগর এবং ছাতক থানার ছাতারপই নিবাসী আব্দুল জলিলের মালিকানাধীন। আব্দুল জলিলের মৃত্যুর পর তাঁর প্রবাসী উত্তরাধিকারীদের পক্ষে কেয়ারটেকারের দায়িত্ব পালন করছেন ছাতারপই গ্রামের মৃত আইন উদ্দিনের ছেলে মোজাক্কির আহমেদ। বর্ণিত দোকানকোটার পূর্বাংশ নিয়ে রওশন খান সাগরের দায়েরি বিবিধ মামলা ১৯৮/১২ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চলমান।গত ১১ সেপ্টেম্বর ’১২ এবং ১২ নভেম্বর ’১৮ তারিখে আদালতের ৩ ও ১২নং নির্দেশ অনুযায়ী ছাতক উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) গত ১৪ নভেম্বর ’১৮ তারিখে দোকানটির পুর্বাংশ ক্রোকবদ্ধ করতঃ সিলগালা করে জাউয়াবাজার ইউপি চেয়ারম্যান এবং বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতির অনুকূলে জিম্মা প্রদান করেন। তবে দোকানকোটার পশ্চিমাংশ মামলা বহির্ভূত এবং তথায় ভাড়াটিয়া রয়েছে। গত ২২ জুলাই বেলা আড়াইটায় এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং চাঁদাবাজ হীরক ও মুক্তাদিরসহ আরো ২/৩জন সন্ত্রাসী বর্তমানে এসি ল্যান্ড-এর সিলগালা করা বন্ধ দোকানকোটার পূর্বাংশের তালা উপড়ে জবরদস্তিমুলক এতে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। কিন্তু দোকানকোটার তালা ভাঙতে ব্যর্থ হয়ে মামলা বহির্ভূত পশ্চিমাংশ দিয়ে জোরপূর্বক ঢুকে দোকানকোটার মধ্যখানের টিনের বেড়া ভেঙ্গে সিলগালা করা অংশে প্রবেশের চেষ্টা করলে পশ্চিমাংশের ভাড়াটিয়াসহ উপস্থিত লোকজন তাতে বাঁধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হিরক ও মুক্তাদিরের নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসীরা তাদের অবৈধ প্রবেশে বাঁধাদানকারী ব্যক্তিবর্গকে মারপিট শুরু করে। আক্রান্তদের হৈ-হল্লায় আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এলে হামলাকারীরা ভাড়াটিয়া ও মিস্ত্রিসহ ঘটনার স্বাক্ষীদের হত্যার হুমকী দিয়ে পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে গত ২৩ জুলাই রওশন খান বাদি হয়ে ছাতক থানায় একটি অভিযোগ পেশ করেন। অজ্ঞাত কারণে অভিযোগটি অদ্যাবধিও রেকর্ডভূক্ত হয়নি।
এদিকে, গত ২৭ জুলাই উক্ত দোকানকোটার মামলা বহির্ভূত নিষ্কণ্ঠক পশ্চিমাংশের টিনের চাল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত টিন পরিবর্তনের জন্য মিস্ত্রিদের কাজে লাগান। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উক্ত হিরক ও মুক্তাদিরের নেতৃত্বে ৪/৫ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল দোকানকোটার মেরামত কাজে বাঁধা প্রদান করে। একপর্যায়ে ওরা রওশন খানের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে, অন্যথায় কাজ বন্ধ রাখতে বলে। সন্ত্রাসীদের কথা উপেক্ষা করে কাজ চালু রাখলে রওশন খান, মোজাক্কির আহমেদসহ, ভাড়াটিয়া, মিস্ত্রি ও স্বাক্ষীদের হত্যার হুমকী দিলে প্রাণের ভয়ে মিস্ত্রিরা কাজ বন্ধ করে চলে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় রওশন খান ও মোজাক্কির আহমেদ হতচকিত্ হন। এমতাবস্থায় রওশন খান স্থানীয় জাউয়াবাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে গিয়ে ইনচার্জ সাজ্জাদুর রহমানকে ঘটনা অবহিত করেন। কিছুক্ষণ পর ইন্সপেক্টর সাজ্জাদুর রহমান জাউয়াবাজারের পরিবহন সেক্টরের চিহ্নিত চাঁদাবাজ রেজা মিয়াকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। সাজ্জাদুর রহমান কোনপ্রকার তদন্ত ছাড়াই রেজা মিয়ার সাথে শলা-পরামর্শ করে দোকানকোটার মধ্যস্থলের পার্টিশান ৩ ফুট সরানো হয়েছে বলে অভিযোগ করে জনৈক মোহাম্মদ আলীকে দিয়ে এসি ল্যান্ড অফিসে মিথ্যে অভিযোগ পেশ করেন। একই সাথে সন্ত্রাসীদের মিথ্যে অভিযোগে রওশন খানের ভাড়াটিয়াকে অন্যায়ভাবে আটক করে আদালতে চালানের আগেই বিধিবহির্ভূতভাবে রিমান্ডের মতো নির্যাতন করেন। যে কারণে ওই ভাড়াটিয়া শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদিকে মোহাম্মদ আলীর মিথ্যে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই এসি ল্যান্ড সরকারি সার্ভেয়ার সহকারে সরেজমিন তদন্তপূর্বক ঘটনা প্রমাণিত হয়নি মর্মে অভিযোগ খারিজ করে আদালতে প্রতিবেদন পেশ করেছেন। পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে ইন্সপেক্টর সাজ্জাদুর রহমানের এহেন কর্মকান্ডে স্থানীয় জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
উল্লেখ্য, জাউয়াবাজারের চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ খ্রিদাকাপন গ্রামের মৃত আরজু মিয়ার ছেলে রেজা মিয়া, মৃত খালিক মিয়ার ছেলে হীরক মিয়া, মৃত রশীদ মিয়ার ছেলে লোকমান মিয়া ও জাউয়া গ্রামের মৃত চান মিয়ার ছেলে গোলাম মুক্তাদিরসহ স্থানীয় চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে জাউয়াবাজারে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)’র সমান্তরাল নতুন সংস্থা তৈরী করে অবৈধ ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলাচলের অনুমতি প্রদান, বেআইনি কার্যকলাপের প্রতিবাদ করায় পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্টকে অন্যায়ভাবে নাজেহাল, পরিবহন সেক্টর, মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জবরদস্তিমুলক চাঁদাবাজিসহ খুন, হত্যাপ্রচেষ্টা, অবৈধ দখলবাজি, মাদক, চাঁদাবাজি, জুয়ার আসর বসানো, জুয়া খেলাসহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এদের অবৈধ অর্থের একটি অংশ নিয়মিত মাসোয়ারা হিসেবে যাচ্ছে ইন্সপেক্টর সাজ্জাদুর রহমানের পকেটে। সম্প্রতি দেশের বহুল প্রচারিত দৈনিক যুগান্তরসহ জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন দৈনিকে এদের অপকর্মের বিবরণ প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ পেয়েছে।
এদিকে, রওশন খান সাগর তাঁর অভিযোগটি রেকর্ডভূক্ত করার জন্য ইন্সপেক্টর সাজ্জাদুর রহমানকে অনুরোধ জানালে তিনি বাদির কাছে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন। বাদি উৎকোচ দিতে রাজী না হওয়ায় ফাঁড়ী ইনচার্জ বাদিকে থানায় অভিযোগ পেশ করার পরামর্শ দেন। বাধ্য হয়ে রওশন খান ছাতক থানায় অভিযোগ দিতে গেলে ডিউটি অফিসারের পরামর্শে ওসি শাহ নাজিম উদ্দিনও ফাঁড়ী ইনচার্জের অনুরূপ বাদির নিকট ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন। বর্তমান সরকারের জনবান্ধব(?) দায়িত্বশীল পুলিশ অফিসারদের এহেন অনৈতিক আচরণে হতাশ রওশন খান নিজেদের নির্ভেজাল দোকানকোটার মেরামতকাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হন। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যেই সিলেট রেঞ্জের ডিআইজিসহ পুলিশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবগত করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুলিশের জাউয়াবাজার তদন্তকেন্দ্রে নামাজের কক্ষ, আধুনিক টয়লেট এবং বিভিন্ন রকমের ফার্নিচারসহ তৈজষ সামগ্রি ক্রয়ের নামে ইন্সপেক্টর সাজ্জাদুর রহমান যুক্তরাজ্য প্রবাসীসহ উপরোক্ত চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের নিকট থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে নিজের পকেট ভারী করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে রেজা মিয়ার নেতৃত্বাধীন দূর্বৃত্তচক্র নির্বিঘেœ জাউয়াবাজারে নানারকমের অন্যায়-অপকর্ম অব্যাহত রেখেছে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা।
পুলিশ সুপার বরাবরে মোজাক্কির আহমেদের পেশকৃত অভিযোগে জাউয়াবাজার পুলিশ ফাড়ী ইনচার্জ সাজ্জাদুর রহমান এবং ছাতক থানার ওসি শাহ নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তাঁদের অপসারণের দাবি জানান।