বিশ্ব পানি দিবসের প্রতিপাদ্য হোক, সবার সুস্বাস্থ্যের জন্য বিশুদ্ধ নিরাপদ পানি চাই
- আপডেট সময় : ০৩:৪৫:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩ ৫৮ বার পড়া হয়েছে
পরম করুনাময় মহান আল্লাহতাআলার অশেষ মেহেরবাণীতে বিশ্ব পানি দিবসের আলোচনায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে কৃতার্থ মনে করছি। সুন্দর ও সাবলিল ভাবে যেন আমি নিরাপদ পানি বিষয়ক কথা গুলো উপস্থাপন করতে পারি সে জন্য মহান রবের সাহায্য কামনা করছি। আমিন।
২২ শে মার্চ বিশ্ব পানি দিবস। জাতিসংঘ সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব পানি দিবস ২০২৩ পালনে বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন আয়োজন করা হয়েছে। এবারের পানি দিবসের প্রতিপাদ্য “পানি ও স্যানিটেশন সংকট সমাধানের জন্য পরিবর্তনের প্রক্রিয়া ত্বরান্নিতকরণ।”
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত এক প্রস্তার অনুযায়ী প্রতি বছর ২২ শে মার্চ বিশ্ব পানি দিবস পালন করা হয়ে থাকে। ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিওতে এ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সেখানে পানি সম্পদের জন্য এক বিশেষ দিন ঘোষণার দাবি তোলা হয়।
১৯৯৩ সালের ২২ শে মার্চ প্রথম পানি দিবস পালিত হয় এবং এর পর থেকে এ দিবস পালনের গুরুত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রতি বছর পানি দিবসে জাতিসংঘের মহাসচিব সহ সকল দেশের মতো বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বিশ্ব পানি দিবসের বিভিন্ন আলোচনা ও বাণী সমূহে উৎস থেকে সমুদ্র অবধি পানির অবারিত প্রবাহ ও ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে পানির সুষম প্রাপ্যতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। পানি ও স্যানিটেশন সংকট সমাধানের উপর জোর দেয়া হয়। কিন্তু মানবদেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পানিকে যথাযথ ও সঠিক নিয়মে বিশুদ্ধ করে ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়নি।
২২শে মার্চ বিশ্ব পানি দিবসের আলোচনায় প্রথমেই মনে পড়েযায় বিখ্যাত নাবিক স্যামুয়েল টেলরের উক্তি -Water water every ware, Noor, any drop to drink.
তিনি দুঃখ করেই এ উক্তিটি করেছিলেন। তার আবেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে নিরাপদ পানি সংকটের চিত্র ফুটে উঠেছে। চারিদিকে শুধু থৈ থৈ পানি কিন্তু পান করার মতো একটুও পানি নেই।
পানির অপর নাম জীবন। মানবদেহের শতকরা ৭০%-৭৫% ভাগ পানি। পৃথিবীর ৩ভাগ জল, আর এর এক ভাগ স্থল। কিন্তু এত জলরাশির মধ্যে ৯৭.৫% শতাংশ নুনা পানি এবং ২.৫% শতাংশ মিঠা পানি। এ মিঠা পানির মধ্যে ১% শতাংশও বিশুদ্ধ নয়। এর পেছনে দায়ি মানব সৃষ্ট বিভিন্ন কর্মকান্ড, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পানির যথাযথ ব্যবহার।
একসময় খাবার পানি হিসেবে মানুষ নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, জলাশয় ও কুপের পানি ব্যবহার করত। এসব পানি বিভিন্ন জীবানু, কিট পতঙ্গ, পশুপক্ষি, সার কিটনাশক ইত্যাদি দ্বারা নষ্ট হত।
ফলে মানুষ নানা প্রকার রোগে আক্রন্ত হত। কলেরা, টাইফয়ে, আমাশয় সহ বিভন্ন পানিবাহতি রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যেত। এখন আর সে অবস্থা নেই। কারন মানুষ এখন টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করে। এক সময় টিউবওয়েলের পানিকে নিরাপদ বলে মনে করা হত।
কিন্তু এখন আর সেই টিউবওয়েলের পানিও নিরাপদ নয়। মানব সৃষ্ট বিভিন্ন কারণে টিউবওয়েলের পানিও আজ বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। ১৯৮০’র দশকের মাঝামাঝি দেশের মানুষ যখন ভূ-গর্ভস্ত পানি ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠে তখনই ধরা পড়ে পানিতে আয়রণ, আর্সেনিকের মত বিষাক্ত পদার্থ। আর সেই আয়রণ আর্সেনিক যুক্ত পানি পান করেই আমরা আক্রান্ত হ”িছ নানা প্রকার জঠিল ও কঠিন রোগে।
বর্তমান সময়ে দেশের শতকরা ৯৫% শতাংশের চেয়েও বেশি মানুষ টিউবওয়েলের পানি ব্যবহার করে। কিন্তু এখন রোগ বেড়েছে আরোও বেশি। গ্যাসটিকতো একটি কমন রোগ। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবার গ্যাসের সমস্যা। আর এ সমস্যার জন্য দায়ি ভূ-গর্ভস্থ পানিতে থাকা ও নাথাকা বিভিন্ন খনিজ উপাদান।
ভূ-গর্ভস্থ পানিতে দ্রবিভুত বিভিন্ন উপাদান যেমনি মানবদেহের জন্য উপকারী তেমনি রয়েছে কিছু অপকারী উপাদান, আবার রয়েছে অনেক উপাদানের ঘাটতি। এসব ঘাটতি উপাদান সমুহ পূরণ করা যেমনি আমাদের প্রয়োজন ঠিক তেমনি যেসব উপাদান অতিরিক্ত রয়েছে সেগুলো ও অপসারণ করা প্রয়োজন।
খনি থেকে আমরা বিভিন্ন খনিজ সম্পদ উত্তোলন করে সরাসরি ব্যবহার করতে পারিনা। এগুলোকে রিফাইন বা পরিশোধন করে ব্যবহার করা হয়। যেমন সামান্য তেল বা গ্যাস খনি থেকে উঠিয়ে গাড়ি বা ইঞ্জিনে সরাসরি ব্যবহার করা হয়না। এগুলো পরিশোধন করে তারপর গাড়ি, মেশিন বা ইঞ্জিনে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু মানবদেহের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পানিকে আমরা রিফাইন বা পরিশোধন না করেই সরাসরি ব্যবহার করে থাকি। তাইতো আমরা আক্রান্ত হই নানা রোগে। অথচ পানির অপর নাম জীবন।
কিন্তু পানিকে যে জীবনে পরিণত করতে হবে সে বাস্তব জ্ঞানটুকু আমাদের নেই শুধুমাত্র পানি সহজলভ্য হওয়ায়। গ্যাসটিকের সমস্যা সমাধানের জন্য নিরাপদ পানিই যথেষ্ট। বর্তমান সময়ে সবাই ঔষধ নির্ভর। বস্তুতপক্ষে আমাদের শারিরিক বিভিন্ন সমস্যা যেমন – বাথ ব্যাতা, ফ্যাটি লিভার, কিডনি রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কলেষ্টোরালের মত জটিল ও কঠিন রোগ সমূহ ধরাশাই নিরাপদ পানির নিকট। পানিকে সঠিক নিয়মে পরিশোধন করে সেই পানি দিয়ে রান্না-খাওয়া ও গোসলের মাধ্যমে যে বহু রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তা কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি ?
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয়- “পানির ওপর নাম জীবন” এই সংজ্ঞাটি ভুল। বরং আমার মতে (ইঞ্জিনিয়ার নুরুল কিবরিয়া চৌধুরী) – “মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় মিনারেল সমৃদ্ধ, আয়রণ, আর্সেনিক ও জীবানু মুক্ত বিশুদ্ধ নিরাপদ পানির অপর নাম জীবন।” দেশের কর্ণদ্বার, শিক্ষা মন্ত্রনালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, দেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ব বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের পাঠ্য পুস্তকে পানির এ সংজ্ঞাটি সংযুক্ত করণের জন্য।
আমি দীর্ঘ দিন যাবত পানি নিয়ে গবেষণা করি। নিজে নিরাপদ পানি ব্যবহার করি ও অপরকে ব্যবহারে উৎসাহিত করি। খর পানি ও মৃদু পানি কি? পানির স্থায়ী খরতা ও অস্থায়ী খরতা সম্পর্কে আমরা পাঠ্য পুস্তকে পড়েছি। কিন্তু বাস্তব জীবনে এ প্রয়োগ নেই বলেই আমরা আজ বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত। কথাটি হয়তো মানানসই নয়, হয়তোবা অতি বাড়াবাড়ি বলে গণ্য হবে, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে- আমরা যেসব শিক্ষকের নিকট পানি সম্পর্কে পড়েছি- এসাইনমেন্ট তৈরী করে জমা দিয়েছি সেসব শিক্ষকরাও নিরাপদ পানি সম্পর্কে বেখবর।
আমার সাথে অনেক কলেজ, বিশ্ব-বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পদার্থবিদ, গবেষক, ক্যামিষ্টদের কথা হয়েছে। অনেকের বাসায় গিয়েছি, পানির অবস্থা দেখেছি। শুধুমাত্র বাস্তবতা নেই বলেই পানির বেহাল দর্শা। আর সেই দশায় আমাদের জীবন ও সর্বনাশা। যেখানে শিক্ষক সচেতন নন, সেখানে ছাত্র সচেতন হবে কিভাবে ?
আমরা বিভিন্ন কলকারখানার মেশিনে পানি পরিশোধন করে ব্যবহার করতে দেখি, মেশিন ভাল রাখার জন্য। অথচ মানবদেহের সুরক্ষার জন্য যে নিরাপদ পানি কতটুকু প্রয়োজন তা আমরা অনুধাবন করিনা। আমাদের বুঝেই আসেনা এর গুরুত্ব। পানিকে পরিশোধন করে রান্না-বান্না, পান করা ও গোসলে ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা যে কথটুকু উপকৃত হতে পারি সে সম্পর্কে আমরা বেখবর। তাইতো প্রতিনিয়ত মাশুল গুণতে হয়।
অনেক জ্ঞান পাপিরা প্রশ্ন ছোড়ে দেয় এগুলো কি অনুমোদিত? তারা প্রশ্ন বানে জর্জরিত করে অংকুরেই বিনষ্ট করতে চান সার। ডুবিয়ে দিতে চান অথৈ তলে। শৈশবে মেরে ফেলতে চান উপুড় করে। কিন্তু আজো সংগ্রাম করে এগিয়ে যাচ্ছি। বর্তমান সময়ে দেশে-বিদেশে আমার অনেক ভক্ত, অনুরক্ত আছেন। যারা আমার উদ্ভাবিত পানি বিশুদ্ধ করণ কিট ও পানির অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করে উপকৃত হয়েছেন। তাদের এ উপকৃত হওয়াটাই আমার প্রেরণার উৎস।
উল্লেখ্য- জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সিলেট ও এস, আর ডিআই ল্যাব, সিলেট কর্তক আমার এ কীট পরিক্ষিত। সময়ের ব্যবধানে ও জনসার্থে আরোও যত প্রকার পরীক্ষা নিরিক্ষা ও পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন তাই করা হবে। হু ও বিশ্ব ব্যাকের সহযোগিতা নিয়ে আমরা আমাদের কার্যক্রমকে তরান্বিত করতে চাই। আলহামদুলিল্লাহ, অনেক প্রেসার, ডায়াবেটিস, কলেষ্টোরাল, শ্বাসকষ্ট ও বাথ ব্যাথায় আক্রান্ত রোগিরা নিরাপদ পানি ব্যবহার করে এর সুফল অনুধাবন করতে পেরেছেন এবং এক হতে এক করে আজ দেশে-বিদেশে আমার অনেক শুভাকাঙ্খি বেড়ে চলেছে।
আমি একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আমার কার্যক্রমকে গতিশিল ও বেগবান করতে চাই। নিরাপদ পানি ও খাদ্য সেবার মাধ্যমে দেশ ও জতীর উন্নয়ন তরাত্বিত করে একটি সুস্থ জাতি উপহার দেয়ার মাধ্যমে আমি আমার সেবাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। সরকার থেকে যথাযথ সহযোগিতা পেলে নিরাপদ খাদ্য ও পানি সেবায় এগিয়ে যাব অনেক দূর। আমি সবার সহযোগীতা প্রত্যাশি।
সুস্থ দেহ ও সুন্দর মন নিয়ে বেঁচে থাক আজিবন। জীবনের প্রয়োজনে বিশুদ্ধ নিরাপদ পানি ব্যবহার নিশ্চিত করতে সবার প্রতি রইল উদাত্ব আহবান। প্রতি দিন প্রতি ঘরে পরিবারের সবার সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত হোক এটাই আমার প্রত্যাশা। আমাদের স্লোগান হোক, “সবার সুস্বাস্থ্যের জন্য বিশুদ্ধ নিরাপদ পানি চাই”
লেখক ও গবেষক : ইঞ্জিনিয়ার নুরুল কিবরিয়া চৌধুরী, পরিচালক – স¦দেশ টেকনোলজি, প্রকল্প – সেল্ফ হেল্প হেল্থ টেকনোলজি