সিলেটের পর্যটনকে সুদূর প্রসারী পরিকল্পনায় আনুন
- আপডেট সময় : ০৩:২৩:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ৬১ বার পড়া হয়েছে
পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সরকারকে জোরালো মনোভাব গ্রহণ করতে হবে। এ শিল্পকে সারাদেশে সম্প্রসারণের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। পর্যটন শিল্পকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে যোগপোযোগী ভাবে সংস্কার করে পর্যটন খাতকে ব্যবসা বান্ধব হিসেবে গড়ে তোলতে হবে।
দেশে ৯০% মুসলমান আর অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির সংস্কৃতির কথা চিন্তা করে দেশব্যাপী পর্যটন খাতকে লাভের মুখে নিয়ে মানুষকে সমৃদ্ধি উপহার দিতে হবে। এখন পর্যটন খাত দেশে দুর্বল। এই দুর্বলতা দিয়ে সকল পর্যটন খাত ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে চলছে। দেশে দেশি-বিদেশী পর্যটকের জন্য পৃথক পৃথক আইনের বিধিমালা থাকতে হবে। যারা পর্যটন ব্যবসায়ী তারা ব্যবসার নামে প্রতারণা, অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধি কিংবা নোংরা পচা-বাসী খাবার দিবে, পর্যটকদের সেবার নামে জিম্মি করে রাখবে, তাদের জন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে।
দেশি-বিদেশী পর্যটকদের জন্য কি রকম সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা যায়, তা নির্ধারণ করে রাখতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সকল পর্যটন এলাকার ভঙ্গুর রাস্তাঘাট সংস্কার, পর্যটন পুলিশের জন্য পর্যটন এলাকায় স্থায়ী ডিউটি কার্যালয় স্থাপন করা যেতে পারে, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য যাতে পর্যটকদের কাছ থেকে হিজড়া গোষ্ঠি, অপরাধী চক্র তথা বেআইনী চাঁদাবাজী করতে না পারে তা বন্ধ করতে পর্যটক আইনে রাখতে হবে।
স্থানীয় পর্যটন এলাকাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখতে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন কর্তৃক নিয়োগকৃত স্মার্ট ভোলান্টিয়ার দিয়ে দুর্নীতি ও ঝামেলা বিহীন ন্যুনতম ২০ টাকা টিকেটের ব্যবস্থা করে প্রতিটি পর্যটন এলাকায় অন্তত পক্ষে ৫টি টিকেট কাউন্টার নির্মাণ, ভোলান্টিয়ার কাউন্টার নির্মাণ করে পর্যটকদের সেবা দিতে হবে। নারী-পুরুষ পর্যটকদের জন্য প্রত্যেক পর্যটন স্পটে সরকারি ভাবে টিকেট ভিত্তিক ফ্রেশ রুম নির্মাণ করতে হবে।
বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের অধিনে প্রতিটি পর্যটন এলাকায় হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট, বিশ্রামাগার সরকারি অর্থে নির্মাণ করতে পারলে পর্যটন ব্যবসা আরো একধাপ এগিয়ে যাবে। এগুলো করতে পারলে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন লোকসান নয়, লাভের মুখ দেখবে। শুধু প্রয়োজন সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
মান্দা আমলের পর্যটন আইন-বিধিকে গুডবাই জানিয়ে স্মার্ট পর্যটন ব্যবস্থার চিন্তা ধারায় দেশের পর্যটন খাতকে কাজে লাগাতে হবে। নতুন পর্যটন ও পর্যটক আইন করে দেশ-বিদেশে প্রদর্শন করে কেমন বাংলাদেশ পর্যটন ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তাহা জানিয়ে দেখাতে হবে। এতে দেশ বিদেশের পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়বে।
সিলেট বিভাগের জৈন্তাপুরের লালাখাল, ডিবির হাওর, গোয়াইনঘাটের জাফলং, বিছনাকান্দি, পানথুমাই, রাতারগুল, কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথর, সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকার পাশে এবং সিলেট সদর এলাকায় দৃষ্টিনন্দন চা-বাগান, নানা প্রজাতির বৃক্ষ বাগান, সরকারি খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান, বিয়ানীবাজারের জলঢুপ, গোলাপগঞ্জের কৈলাশ টিলা, ফেঞ্চুগঞ্জে শেষাংশে হাকালুকি হাওর, বাইক্কা বিল, বড়লেখার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, জুড়ির লাঠি টিলা ইকো পার্ক, শ্রীমঙ্গলের হাম হাম জলপ্রপাত, লাউয়াছড়া, শ্যামলী ইকো পার্ক, চা-বাগান, হবিগঞ্জের সাতছড়ি, মাধবপুর লেক, সুনামগঞ্জে তাহিরপুর সিরাজ লেক, টাঙ্গুয়ার হাওর, শিমুল বাগান, সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের অসংখ্য চা-বাগান ও প্রাকৃতিক পাহাড়-টিলা-জঙ্গল প্রভৃতিতে সরকার পর্যটন কর্পোরেশনের মাধ্যমে জরিপ চালিয়ে ডিজিটাল ম্যাপ তৈরীর মাধ্যমে পর্যটন এলাকাগুলোকে সরকারি ভাবে সংরক্ষণ করে পর্যটনের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। লালাখাল কে নিয়ে কিছু কথা ।
নীল পানি সমৃদ্ধ সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত লালখাল পর্যটন এলাকাটি ভারত সীমান্তবর্তী এলাকা । সারি নদীর উৎসমুখে এই খালের অবস্থান। বছরের সারা মাস লালাখাল নামক নদীর একটি অংশের পানি সারাক্ষণ নীল থাকে। এত সুন্দর নীল পানি মিশরের নীল নদের সাথে তুলনা করা যায়।
লালাখালের নীল পানি দেশের মাঝে আলাদা একটি বিষয়। চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সি-বীচ, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত কিংবা পটুয়াখালী সমুদ্র সৈকতের পানি সব সময় ঘোলা, কখনো নীল রং ধরলেও সারাক্ষণ পানি নীল থাকে না। কারণ এসব সমুদ্র সৈকতে এই পানিগুলোতে নোনা জল থাকে। আর সিলেটের লালাখালের নীল পানি কখনো নোনা জল হয়না।
সারাক্ষণ এই নীল পানি নীলই থাকে। এই নীল পানিতে গোসল করলে স্কীন ভাল হয়ে যায়। বৃষ্টির দিনে লালাখালের নীল পানিতে বৃষ্টি পড়লে অল্প কিছু সময় নীল পানির উপরি ভাগে ঘোলা পানি ঘন্টাখানিক থাকার পর পুনরায় নীল হয়ে যায়। এ যেন আজীবনের নীল পানির জায়গা লালাখাল।
লালাখাল, জাফলং ও সাদাপথর পর্যটন এলাকায় দৃষ্টি নন্দন লাভজনক স্বল্প টিকেটে ব্যবসা করা যায়। যেমন বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের অধিনে এই ৩টি পর্যটন এলাকায় পর্যটক আকর্ষণে সেখানে পানিতে আধুনিক যাত্রী বোট, উদ্ধারকারী বোট, লাইফ জ্যাকেট, ভ্রাম্যমান লঞ্চবোট প্রভৃতি দিয়ে সাজিয়ে আয় করা যায়। ভারতের ডাউকী নদীতে এ রকম দৃষ্টি নন্দন পর্যটন ব্যবসা বান্ধব ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলেও বাংলাদেশের পর্যটন এলাকাগুলোতে সে রকম ব্যবস্থা দেখতে পাওয়া যায় না। অর্থাৎ প্রতিবেশি দেশ ভারতের উন্নতর পর্যটন ব্যবস্থার চেয়ে বাংলাদেশের পর্যটন ব্যবস্থা পিছিয়ে আছে।
লেখক- সাংবাদিক-কলামিস্ট