গোলাপগঞ্জে সেফটি ট্যাংকে আটকা ৪০ পরিবার
- আপডেট সময় : ১০:৩৪:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫ ১৭ বার পড়া হয়েছে
সিলেটের গোলাপগঞ্জের পল্লী অঞ্চলে শতাধিক বছরের পুরনো রাস্তার উপর সেফটি ট্যাংকি নির্মাণ করে প্রায় ৪০টি পরিবার ও শিক্ষার্থীদেরকে বন্দী করে রাখায় উক্ত বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে সেনাবাহিনী গোলাপগঞ্জ ক্যাম্পসহ বিভিন্ন দফতরে আবেদন করেন উপজেলার বাদেপাশা ইউপির উত্তর আলমপুর লম্বাহাটি গ্রামের আছকর আলী গং।
উক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিরসনের জন্য সেনাবাহিনী ক্যাম্পের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় মুরব্বিগণ পৃথক ভাবে সমস্যা নিরসন করলে প্রতিপক্ষ একই এলাকার জয়নাল উদ্দিন গং সেনাবাহিনী গোলাপগঞ্জ ক্যাম্পে মুচলেকা প্রদান ও স্থানীয় মুরব্বীদের বৈঠকে ৩ শত টাকার স্ট্যাম্পে মুচলেকাসহ পৃথক পৃথক মুচলেকা দিয়ে রাস্তা থেকে সেফটি ট্যাংকি অপসারণ করে মাটি দিয়ে ভরাট করে দিবে বলে আশ্বস্ত করেন প্রতিপক্ষ জয়নাল উদ্দিন গং।
সকল মুচলেকাকে তোয়াক্কা না করে জয়নাল উদ্দিন বাদী হয়ে একই এলাকার আছকর আলী গংদের বিবাদী করে অতিরিক্ত জেলা হাকিম আদালতে মামলা করেন এবং মামলা চুড়ান্ত নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ৩য় পক্ষ যাতে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে বাথরুমের সেফটি ট্যাংকি সরাতে না পারেন সে বিষয়ে ১৪৪ ধারা জারি করেন। বিজ্ঞ আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্য গোলাপগঞ্জ মডেল থানাকে নির্দেশ দেন।
সেনাবাহিনী ও স্থানীয়দেরকে প্রদান করা মুচলেকাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে উৎকোচের বিনিময় গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুজ্জামান মোল্লা, তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব ইন্সপেক্টার বিভাষ সিংহ ভূক্তভোগী পরিবার ও এলাকার নিরপেক্ষ লোকদের জিজ্ঞেস না করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাসহ দুষ্কৃতিকারিদের আত্মীয়-স্বজনদের নাম উল্লেখ করে রাস্তার উপর নির্মাণকৃত সেফটি ট্যাংকিকে বাড়ির দেয়াল ও ইজমালী শতাধিক বছরের পুরাতন রাস্তাকে বাড়ির আঙ্গিনা বানিয়ে সম্পুর্ণ মিথ্যে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন উপজেলার বাদেপাশা ইউপির উত্তর আলমপুর লম্বাহাটি গ্রামের মোঃ জাকির হোসাইন। এছাড়াও প্রতিবেদন দাখিল করার পর লোক দেখানো ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন। অর্থাৎ ২৩ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিল করেন এবং ওই দিন বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ওসি ও তদন্তকারী কর্মকর্তা।
গত ২৭ জানুয়ারি সোমবার সিলেট প্রেসক্লাব ও সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে জাকির হোসেন অভিযোগে আরো জানান, সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাদেপাশা ইউপির উত্তর আলমপুর লম্বাহাটি গ্রামে আছকর আলী গং ও জয়নাল উদ্দিন গংদের প্রায় অর্ধ্বশতাধিক পরিবার রয়েছে। তাদের যাতায়াতের জন্য প্রায় শতাধিক বছরের পুরাতন ৬ শত ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থের একমাত্র ইজমাইল রাস্তা উভয়ের বসত ঘরের পাশ দিয়ে ভয়ে গেছে। রাস্তাটি উভয়েই সম্মিলিত ভাবে সংস্কার করে ব্যবহার করে আসছেন যুগ যুগ ধরে।
২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর প্রতিপক্ষ জয়নাল উদ্দিন, মিনহাজ উদ্দিন ও সাকের হাসান গংরা সংঘবদ্ধ হয়ে ইজমালী পুরাতন রাস্তার উপর বাথরুমের সেফটি ট্যাংকির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। এতে করে যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা বন্ধ হয়ে য়ায়। ফলে ইজমালী রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী প্রায় ৪০টি পরিবারসহ শিক্ষার্থী বন্দী হয়ে পড়েন।
এলাকাবাসীসহ স্থানীয় সচেতন মহল সেফটি ট্যাংকি নির্মাণ করতে বাঁধা দিলেও কাউকে কোন পাত্তা না দিয়ে সেফটি ট্যাংকি নির্মাণ করেন। ভূক্তভোগী পরিবার নিরুপায় হয়ে আছকর আলী গং সিলেট জেলা প্রশাসক, সিলেটের পুলিশ সুপার, গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, গোলাপগঞ্জের আওতাধীন সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার ও গোলাপগঞ্জ মডেল থানার বরাবর আবেদন করেন।
সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ৭ ডিসেম্বর উক্ত বিষয়ে আপোষ মিমাংসা করে দেন এবং জয়নাল উদ্দিন গং আপোষ মিমাংসায় মুচলেকা দেন ও শতাধিক বছরের পুরাতন রাস্তাটির উপর থেকে বাথরুমের সেফটি ট্যাংকি ভেঙ্গে মাটি ভরাট করে চলাচলের উপযোগী করে দিবেন। অনুরূপ ভাবে এলাকার সালিশ বৈঠকে ৩ শত টাকার স্ট্যাম্পে মুচলেকা দিয়ে শতাধিক বছরের পুরাতন রাস্তা স্বীকার করে ভবিষ্যতে ইজমালী রাস্তায় কোন নির্মাণ কাজ করে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেন না বলে মুচলেকা প্রদান করেন প্রতিপক্ষ জয়নাল উদ্দিন গং।
পরবর্তীতে সেনাবাহিনী ও এলাকাবাসীর কাছে দেয়া মুচলেকাকে তোয়াক্কা না করে জয়নাল উদ্দিন গং ২০২৪ সালের ৩ ডিসেম্বর একই এলাকার আছকর আলী গংদের বিবাদি করে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা হাকিম আদালতে মামলা দায়ের করেন এবং ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর মামলা চুড়ান্ত নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ৩য় কোন পক্ষ অবৈধ ভাবে প্রভাব খাটিয়ে বাথরুমের নির্মিত সেফটি ট্যাংকি সরাতে না পারে সে বিষয়ে আদালতের মাধ্যমে ১৪৪ ধারা জারি করেন। উক্ত বিষয়টি তদন্তের জন্য বিজ্ঞ আদালত গোলাপগঞ্জ মডেল থানাকে নির্দেশ দেন। মডেল থানার ওসি আবেদনটির তদন্তভারের দায়িত্ব দেন এসআই বিভাষ সিংহকে। ওসি মনিরুজ্জামান মোল্লা অতি উৎসাহী হয়ে চলতি মাসের ২৩ জানুয়ারি এসআই বিভাস সিংহকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় ভূক্তভোগীসহ এলাকার প্রবীণ মুরব্বিদের কোন কিছু জিজ্ঞাসা না করে প্রতিপক্ষের মামলার স্বাক্ষী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনের নাম উল্লেখ করে রহস্যজনক কারণে ও গোপন রফাদফার মাধ্যমে একদিনে দুর্গম এলাকায় তদন্ত করে একই দিনে তদন্তসহ সম্পূর্ণ মিথ্যে বানোয়াট তদন্ত প্রতিবেদন বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করেন।
ভূক্তভোগী পরিবারদের পক্ষে মোঃ জাকির হোসাইন সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ওসি মনিরুজ্জামান মোল্লার সহযোগিতায় ৩৫ থেকে ৪০টি পরিবারের অতি পুরাতন ইজমালী প্রায় দেড় থেকে দুইশত বছর পূর্বের রাস্তার উপর বাথরুমের সেফটি ট্যাংকি নির্মাণ করার সুযোগ করে দেন। বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তসহ ভূক্তভোগী পরিবার ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে রাস্তাটি উদ্ধার এবং থানা পুলিশের মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করায় তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জোর দাবি জানান। পাশাপাশি দাখিলকৃত মিথ্যা প্রতিবেদনটি প্রত্যাখান করে সুষ্ঠু তদন্তসহ ন্যায় বিচার চান ভোক্তভোগী পরিবার। বিজ্ঞপ্তি