সব দেশ যেন করোনার ভ্যাকসিন সময় মতো পায়: প্রধানমন্ত্রী
- আপডেট সময় : ০৬:৫৮:৩৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৩৬ বার পড়া হয়েছে
বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বের সব দেশ যেন সময় মতো এবং একসঙ্গে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিন পায়।
শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ৮টায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।করোনা মহামারির কারণে এই প্রথম জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনটি ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেধাস্বত্ব পেলে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণে এই ভ্যাকসিন উৎপাদন করে দিতে পারবে বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি।অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী করোনার ভ্যাকসিনকে ‘বৈশ্বিক সম্পদ’ হিসেবে বিবেচনা করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আশা করা হচ্ছে বিশ্ব শিগগিরই কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন পাবে। এই ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। সব দেশ যেন এই ভ্যাকসিন সময় মতো এবং একইসঙ্গে পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। কারিগরি জ্ঞান ও মেধাস্বত্ব দেওয়া হলে বিপুল পরিমাণে এই ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রযুক্তিগত বিভাজন নিরসন, সম্পদ আহরণ ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য আমাদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনকে কাজে লাগানো প্রয়োজন। পাশাপাশি স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল এবং সদ্য উত্তরিত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এই আপৎকালীন, উত্তরণকাল ও উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে বর্ধিত আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং প্রণোদনা প্যাকেজ নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দেশের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মহামারি নিরসনে আমাদের উদ্যোগ এবং এজেন্ডা-২০৩০ অর্জনে আমাদের প্রচেষ্টা সমানতালে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ‘ভলান্টারি ন্যাশনাল রিভিউ’ রিপোর্ট উপস্থাপন প্রমাণ করে যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে আমরা যথাযথভাবে এগিয়ে চলেছি। বাংলাদেশকে আমরা ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশ, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ এবং ২১০০ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ব-দ্বীপে পরিণত করতে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রবাসী শ্রমিকদের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী শ্রমিকরা স্বাগতিক ও নিজ দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রেখে চলেছেন। এই মহামারির কারণে অনেক শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। অনেককে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা দেশে ফিরে আসা অভিবাসী শ্রমিকদের প্রণোদনা বাবদ ৩৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছি। তবে কোভিড-পরবর্তী সময়ে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি অভিবাসী শ্রমিকদের বিষয়টি সহমর্মিতার সঙ্গে ও ন্যায়সঙ্গতভাবে বিবেচনা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও অভিবাসী গ্রহণকারী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সংকটকালেও আমাদের বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করতে হচ্ছে। সিভিএফ ও ভি-২০ গ্রুপ অব মিনিস্টারস অব ফাইন্যান্সের সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু সমস্যা উত্তরণে একটি টেকসই পরিকল্পনা প্রণয়নে নেতৃত্ব দেবে। এছাড়াও গ্লাসগো কনফারেন্স অব পার্টিজ (কপ)-এ গঠনমূলক ও কার্যকর ফলাফল নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সর্বদা সচেষ্ট থাকবে।
লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করতে বেইজিং ডিক্লারেশন অ্যান্ড প্ল্যাটফর্ম অব অ্যাকশন কার্যকর ভূমিকা রেখেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই ঘোষণার ২৫ বছর পূর্তি উদযাপনকালে ঘোষণায় উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো বাস্তবায়নে আমাদের দৃঢ় সঙ্কল্প ও পারস্পরিক সহযোগিতার প্রয়োজন। বাংলাদেশে আমরা লিঙ্গ বৈষম্য সামগ্রিকভাবে ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ কমিয়ে এনেছি। আমাদের জাতীয় উন্নয়নের মূলে রয়েছে নারীদের অবদান। মহামারি মোকাবিলাসহ সব কার্যক্রমে বাংলাদেশের নারীরা সামনে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ বছর আমরা উইমেন, পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি এজেন্ডা-এর ২০ বছর পূর্তি উদযাপন করছি। এই এজেন্ডার অন্যতম প্রবক্তা হিসেবে আমরা শান্তি ও নিরাপত্তায় নারীর ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করি। বাংলাদেশ এরই মধ্যে এ বিষয়ে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।